শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:০৬ অপরাহ্ন

শিরোনাম
সাধারণ শিক্ষার সাথে দ্বীনি শিক্ষার সমন্বয় করা না হলে মানুষ অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে যেতে পারে। ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ.ফ.ম. খালিদ হোসেন বলেছেন স্বার্থে পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় এখনই সর্বোচ্চ মনোযোগ দিতে হবে। – পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং টোবগে ঢাকায় পৌঁছেছেন খুলনা বিভাগের উন্নয়নচ্যালেঞ্জে বিশিষ্টজনদের ৫ দফা সুপারিশ মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আগামী ২৫ নভেম্বর ২০২৫ থেকে ১০ ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত ১৬ দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ পালিত হবে। স্কুল শিক্ষার্থীদের নিয়ে হাইজিন ক্যাম্পেইন শুরু করলো লায়ন কল্লোল দ্য ওয়েস্টিন ঢাকা আয়োজন করছে “টেস্ট অফ অ্যারাবিয়া” – আরব বিশ্বের আসল স্বাদ ও সমৃদ্ধ রন্ধন ঐতিহ্যের এক অনন্য উৎসব প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপার্সনের সৌজন্য সাক্ষাৎ আলেমদেরকে রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসতে হবে          -ধর্ম উপদেষ্টা সশস্ত্র বাহিনী দিবস আজ ২১ নভেম্বর ২০২৫

উচ্চশিক্ষার পরিবেশ ক্রমেই অধঃপতিত হয়েছে, শিক্ষিত বেকার আশঙ্কজনকভাবে বেড়েছে

মো সিকান্দার আলী / ২৬২ পাঠক
প্রকাশকাল শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:০৬ অপরাহ্ন

‘উচ্চশিক্ষায় বৈশ্বিক মান: বাংলাদেশের করণীয়’ শীর্ষক সম্মেলনে ২২ ডিসেম্বর প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেল,

দেশে উচ্চশিক্ষার পরিবেশ বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষার পরিবেশ ক্রমাগত অধঃপতিত হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। এই অধঃপতিত হওয়ার কিছু কারণ বলেছেন তিনি। সেগুলো হলো শিক্ষকদের লেজুড়বৃত্তিক দলীয় রাজনীতি, ছাত্ররাজনীতির নামে দখলদারত্ব ও দুর্বৃত্তায়ন এবং শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম।

এগুলোর বাইরেও দেশে উচ্চশিক্ষাব্যবস্থায় বড় সমস্যা থাকার কারণে উপযুক্ত মানবসম্পদ তৈরি করা যাচ্ছে না বলে উল্লেখ করেন শিক্ষা উপদেষ্টা। তিনি বলেন, সে কারণেই শিক্ষিত বেকারের সমস্যা আশঙ্কজনকভাবে বেড়েছে।

আজ রোববার ‘উচ্চশিক্ষায় বৈশ্বিক মান: বাংলাদেশের করণীয়’ শীর্ষক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপদেষ্টা এ কথা বলেন। রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে দৈনিক বণিক বার্তা।

অনুষ্ঠানে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা, করপোরেট প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে এ খাতের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিরা বক্তব্য রাখেন। তাঁদের কেউ কেউ রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস করা, নিয়োগ ও পদোন্নতি রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করা, প্রাইভেট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান বিভাজন দূর করা, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও পিএইচডির সুযোগ সৃষ্টি করা, ইন্ডাস্ট্রি ও শিক্ষার মধ্যে সংযোগ স্থাপন করাসহ শিক্ষা বিষয়ে বিভিন্ন মতামত তুলে ধরেন। আর উচ্চশিক্ষার গুণগত মানের জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়ারও পরামর্শ দেন বক্তাদের কেউ কেউ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উচ্চশিক্ষার বিভিন্ন প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, সব মিলিয়ে উচ্চশিক্ষায় যে একটা বড় সমস্যা আছে, তা দেখা যায় কতগুলো দিকে তাকালে। একটা হলো এইচএসসি পাস করার পরই যারা মেধাবী ছাত্র, যাদের আর্থিক সামর্থ্য আছে, তাদের কেন এত বিদেশে চলে যেতে হবে? তিনি বলেন, ‘আমরা যখন এইচএসসি পাস করেছিলাম, তখন তো এটার কথা চিন্তা করতাম না। আর আমাদের দেশে যারা উচ্চশিক্ষা পাস করে বের হচ্ছে, তাদের মধ্যে তো কর্মসংস্থানের অভাব দেখা দিয়েছে। শিক্ষিত বেকারের সমস্যা আমাদের এত ছিল না। এখন এটি আশঙ্কজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা উপযুক্ত মানবসম্পদ তৈরি করতে পারছি না, সেটাও দৃশ্যত দেখা যাচ্ছে। কাজেই উচ্চশিক্ষায় সমস্যা আছে, কোনো সন্দেহ নেই।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির সাবেক অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘উচ্চশিক্ষার পরিবেশ বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ক্রমাগত অধঃপতিত হয়েছে। এর পেছনে যেসব কারণ আছে, সেগুলো সবারই জানা। এর মধ্যে আছে শিক্ষকদের লেজুড়বৃত্তিক দলীয় রাজনীতি, ছাত্ররাজনীতির নামে দখলদারত্ব ও দুর্বৃত্তায়ন—এগুলো সবই জানি।’

আরেকটি বিষয় দীর্ঘ মেয়াদে অত্যন্ত ক্ষতিকর উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সেটি হলো শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে। একটা সময় পর্যন্ত যখন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করতাম, আমার উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ (বর্তমানে ইউজিসির চেয়ারম্যান এবং আজকের অনুষ্ঠানে তিনিও অতিথি ছিলেন)। তখন পর্যন্ত কিন্তু শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়মনীতিগুলো ঠিকই পালন করা হতো। কিন্তু গত দেড় দশকে শিক্ষক নিয়োগে প্রভাষক পর্যায়ে নিয়োগে প্রচণ্ড অনিয়ম শুরু হয়েছে। এতে দীর্ঘমেয়াদি প্রচেষ্টাগুলোকে পঙ্গু করার একটি আশঙ্কা দেখা দেয়।’

অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, শিক্ষার পরিবেশের এত অবনতি, অনিয়ম ও দুর্নীতির মধ্যেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অনেক শিক্ষক আছেন যাঁরা ব্যক্তিগত পর্যায়ে নিজ নিজ বিষয়ে আন্তর্জাতিকমানের অত্যন্ত উঁচু পর্যায়ের গবেষক। এটা দৃষ্টিগোচর হয় না, অনেক কারণে।

উচ্চশিক্ষার জন্য কিছু করণীয় বিষয়েও আলোকপাত করেন শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, ইউজিসির কর্মপরিধি বাড়িয়ে এটিকে উচ্চশিক্ষা কমিশন বা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন নামকরণ করে কিছু কিছু নতুন কর্মপরিকল্পনা বা দায়িত্ব দেওয়া যায় কি না, সেটি চিন্তা করা যেতে পারে। আর শিক্ষার বাজেট বাড়ানোর বিকল্প নেই। তবে এটি হঠাৎ করেই করা যাবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এ ছাড়া বিদেশে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথ শিক্ষা কার্যক্রমের ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার একটা সুস্থ পরিবেশ তৈরি করতে চাই। এখন আমরা যে চেষ্টা চালাচ্ছি, অল্পস্বল্প সময়ের জন্য দলীয়করণ বাদ দিয়ে একটি পরিবেশ তৈরির যে চেষ্টা চলছে, এটি যদি অব্যাহত থাকে, যেখানে মেধার স্বীকৃতি ও প্রকৃত মূল্যায়ন হবে এবং বৈশ্বিক মানের উচ্চশিক্ষার পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য যেন আরও আগ্রহী হতে পারি। এ ছাড়া আগের মতো দলীয় রাজনীতির নামে দুর্বৃত্তায়ন ও দলখদারির ছাত্ররাজনীতি যেন আর ফিরে না আসে।’

‘উচ্চশিক্ষায় বৈশ্বিক মান: বাংলাদেশের করণীয়’ শীর্ষক সম্মেলনে অংশ নেন সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা, করপোরেট প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে এ খাতের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিরা। প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেল,

বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ, সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরী, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম মিয়া, আইইউবিএটির উপাচার্য অধ্যাপক আবদুর রব, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক এম লুৎফর রহমান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (অস্থায়ী) অধ্যাপক মোহাম্মদ শাহিনুল আলম, সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোসলেম চৌধুরী, অধ্যাপক ম. তামীম, রেজোয়ান খান, গ্রামীণ ফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসির আজমান, প্রাণ আরএফএলের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান খান চৌধুরী, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসির এজাজ বিজয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা প্রমুখ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *