সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৩৪ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম
সরকার কৃষক ও ভোক্তা উভয়ের স্বার্থ সংরক্ষণের চেষ্টা করছে – স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা নির্বাচন ও গণভোটের প্রস্তুতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করলেন সিইসি বাণিজ্য উপদেষ্টার সাথে থাইল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত এর বৈঠক খাদ্যদূষণ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার উদ্বেগ, সংকট মোকাবিলায় সকলকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান বায়তুল মুকাররম মসজিদে ইবাদতবান্ধব ধর্মীয় আবহ তৈরি হয়েছে- ধর্ম উপদেষ্টা বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত জুলাই আন্দোলনের শহীদ ১১ স্কাউটের আত্মত্যাগে নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের প্রেরণা খুঁজে পাই — শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি. আর. আবরার জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় নারী উদ্যোক্তাদের জন্য অতিরিক্ত অর্থায়ন প্রয়োজন -মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বন্যপ্রাণী রক্ষায় নতুন প্রজন্মের অগ্রণী ভূমিকা অনস্বীকার্য – উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বাংলাদেশ মিশন আদ্দিস আবাবায় ই-পাসপোর্ট সেবা কার্যক্রম এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে।

তরুণদের দায়িত্ব নিতে হবে পুনরায় শশীলজের, ভেনাসের ভাস্কর্য তৈরী করার”

মোঃ সিকান্দার আলী / ২৭৬ পাঠক
প্রকাশকাল সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৩৪ পূর্বাহ্ন

মূর্তি যারা গড়েন, ট্রেডিশনাল আর্টিস্ট, তাদের জায়গা কোথায়? এই প্রশ্ন সামনাসামনি পরিস্কার করতে হবে।“- ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ, মহাপরিচালক, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি।

“ইউরোপের হেজিমনি ভাঙতে না পারলে আমাদের আর্টকে আমরা সঠিকভাবে অনুধাবন করতে পারবো না, হৃদয়গ্রাহীও করতে পারবো না।“- মোহাম্মদ জাহিদুল হক, সহকারী অধ্যাপক, ভাস্কর্য বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে ১০ জানুয়ারি ২০২৫, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬ টায় ২য় পর্বে অনুষ্ঠিত হয়েছে “ভাস্কর্য: সাম্প্রতিক নির্মাণ ও বিনির্মাণ’। জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনের এ আয়োজনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও সভাপতি ভাস্কর ইমাম হোসেন (সুমন)। আলোচক হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির প্রযোজনা বিভাগের পরিচালক আব্দুল হালিম চঞ্চল এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহিদুল হক।

আলোচনায় মোহাম্মদ জাহিদুল হক বলেন, “আমাদের এখানে সাম্প্রতিক সময়ে কিছু সমস্যা হয়েছে ভাস্কর্য ভাঙা নিয়ে। গ্রিসে এক সময় অনেক রিয়েলিস্টিক ভাস্কর্য ছিলো। গ্রিসের একজন বিখ্যাত দার্শনিক ডায়োজেনস

ভাস্কর্যের কাছে ভিক্ষা চাইতেছিলো, যুক্তিবাদী লোকজন বললেন ভাস্কর্যের কাছে কেন ভিক্ষা চাচ্ছেন, দার্শনিক বলেন আমি রিফিউজবা প্রত্যাখ্যাত হতে চাই। আমাদের ছেলেরা শশীলজের, ভেনাসের ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলেছে, সেক্ষেত্রে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে তারা যে প্রত্যাখ্যাত হবে এটা তারা কোথায় প্রাকটিস করবে। এটা ভাঙা ঠিক হয় নি। তরুণদের দায়িত্ব এটা পুনরায় তৈরী করতে হবে।“

আলোচক মোহাম্মদ জাহিদুল হক আরো বলেন, “ইউরোপে হাই আর্টের বিরুদ্ধে যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা ফাইট না করবো ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা বুঝবো না ক্যালিগ্রাফিও “হাইআর্ট”। মুসলিমরাও যে ফ্লোরাল আর্টগুলো করেছে , জাপানিরা যে কিমানু গোলা বানিয়েছে, আমাদের মায়েরা যে রুমাল শেলাই করে এবং অনান্য এক্সপ্রেশন সবই “হাই আর্ট”। ইউরোপের হেজিমনি না ভাঙতে পারলে আমাদের আর্টকে আমরা সঠিকভাবে পারসিভ করতে পারবো না, হৃদয়গ্রাহীও করতে পারবো না।“

পরে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, “আমাদের ট্রেডিশনাল শিল্পী, পাল সম্প্রদায়ের যারা রয়েছেন, যারা মূর্তি গড়েন তাদের ভবিষ্যত কি? তারা কি মূর্তি গড়তে পারবে স্বাচ্ছন্দে, নির্দিধায়? আমি এথ্নলজি ধরে একেবারে গ্রামে গ্রামে গিয়ে কাজ করেছি। অনেক গ্রামে পালপাড়ায় গিয়েছি, তারা শঙ্কিত । তারা বাংলাদেশ ছাড়বে কি না ভাবছে, তাদের মূর্তির আদৌ কোন বাজার আছে কি না ভাবছে, মূর্তি পূজা আদৌ করতে পারবে কি না সেটা নিয়ে তারা ভাবছে। এটাকে আপনি ভাস্কর্য বলেন নাকি মূর্তি বলেন সেটা আলাদা রাজনীতি। কিন্তু সংস্কৃতির ক্ষেত্রে ধর্ম যেখানে গুরুত্বপূর্ণ সেখানে আমাদের বিষয়টাও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা কি আসলেই লেজিটিমাইজ করতে যাচ্ছি যে, আমরা ইসলাম কেন্দ্রীক যে চিন্তা করি , তার কারণে রিপ্রেজেন্টেশনাল কাজ না করে নন রিপ্রেজেন্টেশনাল কাজ করা এখন প্রয়োজন, যেখানে ইউরোপের অনুকরণধর্মী বাস্তবধর্মী মূর্তি গড়ার দরকার নাই আমাদের।“

মহাপরিচালক আরো বলেন, “সামনের আর্টের স্বরুপ কি হবে? ইসলামের বিষয়গুলো আমি থিয়েটারের দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখেছি , যেখানে নবীজী কোথাও থিয়েটারকে অগ্রাহ্য করেন নি বরং কৃষ্নাঙ্গ ক্রীতদাসরা যে নাচ করছিলো, তা আয়েশাকে পাশে তুলে দেখিয়েছেন। আমার এ সংক্রান্ত বই রয়েছে In Praise of Niranjan: Islam Theatre and Bangladesh (২০০১),। খুব পরিস্কার যে, থিয়েটার পারফরমেন্সকে ইসলাম কোথাও নিষিদ্ধ করে নি, কিন্তু মূর্তি পূজা নিষিদ্ধ করেছে।“

তিনি আরো বলেন, “মুখোমুখিভাবে আমাদের একটা সিদ্ধান্তে আসতে হবে, পাশ্চত্যের চিন্তা ধারা থেকে ইউরোপ যখন সরে আসছে, যখন রিপ্রেজেন্টশন আর্টকে খারিজ করছে, তখন আমরা কি পরোক্ষভাবে বলতে চাই যে, আমাদের বাংলাদেশে নন রিপ্রেজেন্টেশন আর্ট করা বাঞ্ছনীয়্ । এখানে মূর্তি যারা গড়েন, ট্রেডিশনাল আর্টিস্ট তাদের জায়গা কোথায় এই বিষয়টি সামনাসামনি পরিস্কার করতে হবে।“

এর আগে বিকেল ৩ টায় প্রথম পর্বের আলোচনায় “ভাস্কর্য: আধুনিকতার প্রাথমিক পর্ব ও নভেরার উত্থান” মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাহিত্য পত্রিকা প্রতিধ্বনির সম্পাদক কবি ও লেখক সাখাওয়াত টিপু। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষক ও গবেষক রেজাউল করিম সুমন এবং শিক্ষক, শিল্পী ও গবেষক দীপ্তি দত্ত। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন চারুকলা বিভাগের পরিচালক মোস্তফা জামান।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *