শুক্রবার, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০১ অপরাহ্ন
রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তবে তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক দল গঠন করতে গিয়ে কেউ যদি রাষ্ট্রীয় কিংবা প্রশাসনিক সহায়তা নেন, সেটি জনগণকে হতাশ করবে। অতীত থেকে বেরিয়ে এসে তরুণেরা নতুন পথ রচনা করবেন। তবে কোনো প্রশ্নবিদ্ধ পথ নয়। পথটি অবশ্যই স্বচ্ছ হওয়া উচিত।
আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত শিক্ষক সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন তারেক রহমান। তিনি লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি এই সমাবেশে যুক্ত হন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রতি ইঙ্গিত করে সমাবেশে তারেক রহমান বলেন, দেশের ছাত্র-তরুণেরা রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন, এটি অবশ্যই ইতিবাচক দিক। এসব তরুণই গত দেড় দশকে নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকারবঞ্চিত এসব তরুণের কেউ যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নতুন কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করেন, অবশ্যই বিএনপি সেই উদ্যোগকে স্বাগত জানায়। তবে রাজনৈতিক দল গঠন করতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় কিংবা প্রশাসনিক সহায়তা নেওয়া হলে তা জনগণকে হতাশ করবে। কিংবা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি তাদের আচরণ কিংবা বক্তব্য–মন্তব্য যদি ঝগড়াসুলভ অথবা প্রতিহিংসামূলক হয়, সেটিও জনগণের কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত হবে।
সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হয়নি
সংবিধানে মহান মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হয়নি বলেও মনে করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি, পলাতক যে স্বৈরাচার, তারা তাদের ইচ্ছেমতো সেটিকে কাটাছেঁড়া করে রাষ্ট্রীয় সংবিধানকে প্রায় দলীয় সংবিধানে রূপ দিয়েছে। ঠিক একইভাবে নির্বাচন কমিশন কিংবা দুদকের (দুর্নীতি দমন কমিশন) মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও তারা একদম অকার্যকর করে দিয়েছিল। দুদক সম্পর্কে তারা নিজেরাই দন্তহীন বাঘ বলেছে।’
নির্বাচন কমিশন, দুদক এবং সংবিধানসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে, বিএনপি ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচিও একই রকম বলে উল্লেখ করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের সঙ্গে দু-একটি মৌলিক বিষয় ছাড়া, প্রক্রিয়াগত বিষয় ছাড়া তেমন কোনো ভিন্নমত বা বিরোধ নেই। সংস্কার এবং নির্বাচন—দুটিরই পক্ষে বিএনপি, দুটোই অত্যন্ত জরুরি। সংস্কার নাকি নির্বাচন—কেউ কেউ এমন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রশ্ন তুলে কূটতর্ক করার অপচেষ্টা করেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কোনো বিষয়ে ভুল–বোঝাবুঝি কিংবা অযথা কূটতর্ক সময়ের অপচয় বলে মনে করেন তারেক রহমান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জনগণ যদি বৃহত্তর স্বার্থে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতা ধৈর্য ধরে মেনে নিতে পারে, তাহলে যাঁরা সরকারে রয়েছেন তাঁদের ধৈর্য এবং সহনশীলতা আরও অনেক বেশি থাকা জরুরি। নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে অযথা বিতর্ক সৃষ্টি করার অর্থ নিজের অজান্তে পরাজিত ও পলাতক ফ্যাসিস্টদের অবস্থানকে শক্তিশালী করা।
এই মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ ‘সংসার’
দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, দেশের কোটি কোটি পরিবারের কাছে এই মুহূর্তে নির্বাচন এবং সংস্কারের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সংসার পরিচালনা করা। একদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, অপর দিকে জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া ভ্যাটের বোঝা। কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর, স্বল্প আয়ের এমনকি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর কাছেও সংসার টেকানো অনেক ক্ষেত্রে দায় হয়ে পড়েছে। অনেক পরিবারে চলছে নীরব হাহাকার।
তারেক রহমান বলেন, কীভাবে জনগণের নিত্যদিনের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করা যায়, কীভাবে বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে দ্রব্যমূল্য জনগণের হাতের নাগালে রাখা যায়; কীভাবে জনগণকে ফ্যাসিস্টের আমলের মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই দেওয়া যায়; কীভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সক্রিয় করা সম্ভব; জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়, অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায় এ বিষয়গুলো থাকা অত্যন্ত জরুরি।
বিএনপির এই নেতা বলেন, এখন প্রশ্ন অন্তর্বর্তী সরকার এত দিনেও কেন বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ। এমন পরিস্থিতিতে জনগণের সামনে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, তাহলে সরকারের কেউ কেউ অন্য কোনো ইস্যুতে বেশি মনোযোগী, নাকি সরকার পারছে না। তবে তিনি এ-ও বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের নানা সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আমরা মনে করি, এই সরকারকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। হাজারো শহীদের রক্ত মাড়িয়ে একটি গণতান্ত্রিক, মানবিক, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে এই সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে।’