বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫, ০৭:০৯ অপরাহ্ন

শিরোনাম
শিক্ষা সচিব পরীক্ষা পেছাতে রাজি হয় নাই শিক্ষার্থীদের বিক্ষুব্ধ করতেই এই কৌশল নিখোঁজ পরিবারের সদস্যদের মালিবাগস্থ সিআইডি ভবনে গিয়ে ডিএনএ ম্যাচিংয়ের উদ্দেশ্যে নমুনা প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে, অবশেষে রাইসা খোঁজ মিলেছে পলিথিন বিরোধী মোবাইল কোর্ট অভিযানে ৭ টি মামলা, ৫৮৬ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকা হতে ৮০০০ পিস ইয়াবাসহ দুই মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করেছে ডিবি-গুলশান। গ্রেফতারকৃতদের নাম-মো: আবু জাহের (৫৬) ও মনোয়ারা বেগম (৫২) । জরুরি রক্তের প্রয়োজনে সেতু বিভাগ এবং বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের রক্তদাতাগণ প্রস্তুত রয়েছেন। বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে – অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান হতাহতের তথ্য গোপন করা হচ্ছে দাবি করে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, আমরা অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে জানাতে চাই যে, এ দাবি সঠিক নয়। তাৎক্ষণিক চিকিৎসা ও রক্তের প্রয়োজন মেটাতে সর্বোচ্চ প্রস্তুত বার্ন ইনস্টিটিউটে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমে বিজিবির জনসচেতনতামূলক সভা: মাইন বিস্ফোরণে আহতদের আর্থিক সহায়তা প্রদান, শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার সামগ্রী এবং দুস্থ নারীদের সেলাই মেশিন বিতরণ

শিক্ষা সচিব পরীক্ষা পেছাতে রাজি হয় নাই শিক্ষার্থীদের বিক্ষুব্ধ করতেই এই কৌশল

মোঃ সিকান্দার আলী / ৫৬ পাঠক
প্রকাশকাল বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫, ০৭:০৯ অপরাহ্ন

মাইলস্টোন স্কুলে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত ঘটনায় মঙ্গলবারের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিতের প্রস্তাব দেয় আন্তঃশিক্ষা বোর্ড, বোর্ডের সেই প্রস্তাব নাকচ করে পরীক্ষা চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জুবায়ের, এমন সিদ্ধান্তের জেরে গভীর রাতে শিক্ষা উপদেষ্টার বাসায় যান তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, সিদ্ধান্ত নিয়ে রাত দুইটায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দেন, এই ঘটনায় গতকাল সচিবালয় ঘেরাও করেন বিক্ষুব্ধ পরীক্ষার্থীরা, সেখানে পুলিশ-শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। শিক্ষা প্রশাসনের আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন ও নানা ইস্যুতে বিতর্ক জন্ম দেয়ায় এই সচিবকে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত জানান তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।্

সোমবারের ঘটনার পর সরকার যখন রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেন তখন মঙ্গলবারের পরীক্ষা স্থগিতের বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়, শিক্ষা উপদেষ্টা রাজি হলেও সচিব রাজি হননি, তিনি শিক্ষাবোর্ডকে পরীক্ষা চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেন, এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠালে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম শিক্ষা উপদেষ্টার বাসায় যান, এরপর রাত দুইটায় সেই পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়,
শিক্ষাবোর্ডগুলোর আইন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, শিক্ষাবোর্ড গুলো বিশেষ অ্যাক্টের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। পরীক্ষা নেয়া, ফলাফল প্রকাশের জন্য তাদের সর্বময় ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, ব্রিটিশ সরকারের আমলে করা ১৯৬১ সালে অর্ডিন্যান্স সংশোধন হয় ২০২১ সালে, সেই অর্ডিন্যান্সের ধারা ২, সাব-সেকশন (২-এ) বলা হয়েছে মহামারী, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা সরকারের দ্বারা নির্ধারিত অন্য কোনো অনিবার্য পরিস্থিতির কারণে ইন্টারমিডিয়েট ও সেকেন্ডারি পর্যায়ের বা এর যেকোনো পর্যায়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত করা সম্ভব না হলে সেই পরীক্ষা স্থগিত করা যাবে। শুধু তাই নয়, পরীক্ষা ছাড়াই মূল্যায়ন এবং সনদ দিতে পারবে কিংবা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নিতে পারবে। সেই আইনি ক্ষমতা ব্যবহার করে করোনার সময় পরীক্ষা না নিয়ে অটোপাস, পরবর্তী দুই বছর সাবজেক্ট ম্যাপিং এবং অর্ধেক বিষয়ে পরীক্ষা নেয়া হয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনার পতনের পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পান ড. শেখ আব্দুর রশীদ, এ সময় মন্ত্রণালয়ের পরিবর্তন শুরু হলে তাকে মন্ত্রপরিষদ সচিব হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। সেখানে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয় ৫ম ব্যাচের কর্মকর্তা সিদ্দিক জোবায়েরকে, মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে বদলি-পদায়ন মূলত সচিবের অধিক্ষেত্র, এই কর্মকর্তার পিডিএস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, অতিরিক্ত সচিব হিসেবে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চাকরিতে থেকে অবসরে যান। এর আগে ২০১৪ সালের ৯ মার্চ পতিত শেখ হাসিনার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর হাত ধরে যুগ্মসচিব হিসেবে বিদ্যুৎ বিভাগে পদায়ন পান। এই মন্ত্রণালয়ে থাকাকালে ২০১৭ সালে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পদোন্নতি পান। অতিরিক্ত সচিব পদোন্নতি নিয়ে একই মন্ত্রণালয়ে ২০১৯ সালের ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন, নসরুল হামিদ বিপুর দায়িত্বশীল পদে থেকে অবৈধ উপায়ে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৩৬ কোটি টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন ও ৯৮টি ব্যাংক হিসাবে মোট ৬ হাজার কোটি টাকা অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেন করায় তার বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে মামলা করে দুদক।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, শুধু পরীক্ষা স্থগিতের ইস্যুতে নয়, গত ১০ মাসের বিতর্কিত নানা কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ ছিল সরকার। বিশেষ করে শিক্ষা প্রশাসনে পতিত আওয়ামীপন্থ’ীদের পদায়ন করা, বদলি বাণিজ্যের ব্যাপক অভিযোগ উঠতে থাকে। এর আগে দুই দফায় তাকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি সরকারের দুইজন উপদেষ্টার হস্তক্ষেপের কারণে। এবার সেই ছায়াতল থেকে বের করে সরানো হলো আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী এই কর্মকর্তাকে।

একাধিক কর্মকর্তাদের ভাষ্য, তিনি আওয়ামী লীগপন্থী ও সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদের একের পর এক পদায়ন শুরু করেন। এতে শিক্ষা প্রশাসনে অস্থিরতা শুরু হয়। ছাত্রজীবনে ছাত্রদল ও শিবির করা কর্মকর্তাদের হয়রানি শুরু করেন, শিক্ষা অধিদফতরের একজন উপপরিচালক কে প্রায় সরিয়ে দিয়েছিলেন, যিনি পরে রাজনৈতিক দেনদরবার করে পদ রক্ষা করেছেন, সচিব তার নিজ জেলা নারায়ণগঞ্জ থেকে একাধিক কর্মকর্তাকে মাউশিতে পদায়ন করেন। পরিচালক (প্রকিউরমেন্ট) এবং উপপরিচালক (মাধ্যমিক উইং) দু’টি গুরুত্বপূর্ণ পদে বসান তার আস্থাভাজন দুইজনকে, দীপু মনি ও নওফেলের ক্যাশিয়ার খ্যাত ব্যানবেইসের সাবেক সহকারী পরিচালক হাবিবুর রহমানকে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের উপপরিচালক (অর্থ) পদে পদায়ন করেন ২০ লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে এমন অভিযোগ রয়েছে। হাবিবের অতীত রেকর্ডের কারণে ওই দফতর প্রথমে তাকে যোগদান করতে দেয়নি, পরে মাউশির একজন পরিচালককে টাকা দিয়ে রাজি করান এবং সচিব প্রধান প্রকৌশলীকে চাপ দেন। যদিও হাবিব এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

গত ফেব্রুয়ারিতে শিক্ষা প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদ মাউশির অধিদফতরের মহাপরিচালক করেন বরিশালের সিটি করপোরেশনের মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর আস্থাভাজন এহতেসাম উল হককে, পরে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা সচিবের রুমে এ নিয়ে হট্টগোল করলে মাত্র ২০ দিনের মাথায় তাকে সরিয়ে দেয়। এই মহাপরিচালককে নিয়ে আসেন সচিব। শুধু তাই নয়, দীপু মনির ঘনিষ্ঠজন এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের পরিকল্পনা শাখার আলোচিত পরিকল্পনা পরিচালক শফিউল আজমকে তার পদে রেখে সব প্রকল্পের তদারকি করাতেন। শিক্ষা খাতের অধিকাংশ প্রকল্পের কমিশন পূর্ববর্তী সরকারের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে নেয়া হতো, শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রকল্পে স্মার্ট টিভির পরিবর্তে ইন্টারেক্টিভ প্যানেল ব্যবহারের মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা কমিশন নেয়ার সবব্যবস্থা তিনি করেন।
তার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ ছিল-২০২৪ সালের ৪ আগস্ট শিক্ষাভবনে জুলাই আন্দোলনবিরোধী মিছিল বের করা শিক্ষা ক্যাডারের কতিপয় কর্মকর্তা। যে মিছিলে ‘চলছে লড়াই চলবে, শেখ হাসিনা লড়বে এবং ‘শিক্ষামন্ত্রীর বাসায় হামলা কেন, খুনি খালেদা জবাব দে’ এমন নানা স্লোগানধারীদের রক্ষা করেন সিদ্দিক জুবায়ের। সেই ক্যাডার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুই দফায় ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ আটকে যায় তার বাধায়। সর্বশেষ মাউশির মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন উইংয়ের পরিচালক ওই স্লোগানদাতাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে গত ২৪ জুন ২১ জন এবং ২০ জুলাই আরো ২০ জন ক্যাডার কর্মকর্তাকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ যেন করতে না পারে সেই উদ্যোগে বাধা দেন তিনি।

শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, সিদ্দিক জুবায়ের একটি ‘ভয়ঙ্কর প্ল্যানের’ অংশ হিসেবে সরকারকে তরুণ সমাজের মুখোমুখি করেছিলেন। এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত নিয়ে নানা টালবাহানা করেন তিনি। শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরারের প্রশাসনিক বিষয়ে সরলতাকে কাজে লাগিয়ে সিদ্দিক জুবায়ের একটি ‘ব্লান্ডার’ (ইচ্ছাকৃত ভুল) তৈরির চেষ্টা করেন। সচিবের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও। সেই সুবাদে শামীম ওসমানের সাথে তার সখ্য ছিল এবং তার পরিবারের আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি বারবার উঠে এসেছে। আওয়ামী লীগের অনুসারীদের মাউশি, এনসিটিবি, ও নায়েমে পদায়ন করতে তিনি সহযোগিতা করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে, তার একক সিদ্ধান্তে স্কুল ভর্তিতে বিতর্কিত জুলাই কোটা চালু করে সমালোচনার মুখে তা সংশোধন করেন, নায়েমের পরিচালক পদে সৈয়দ সারাহ শিমুল, বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ পদে চিহ্নিত আওয়ামী লীগারদের পদায়ন দিয়েছেন তিনি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজের ৭০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলাকারী অধ্যাপক মালেকা আক্তার বানুকে করা হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *