সোমবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩:৪১ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম
নির্বাচনের সময় সাংবাদিকদের সতর্ক, সচেতন ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে –তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা ঢাকার টঙ্গী এলাকা হতে ইতালিতে পাচারকালে টাওয়ালের মধ্যে বিশেষ কায়দায় (Chemical Impregnation) লুকায়িত অবস্থায় ৬.৪৪ কেজি ভয়ংকর মাদক কিটামিন জব্দ এবং চাঁদপুর ও ফরিদপুর হতে ২ জন আসামি গ্রেপ্তার। উচ্চাভিলাষী জলবায়ু পদক্ষেপে বাংলাদেশ-ব্রাজিল ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে – পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জাহাজ নির্মাণ আইন যুগোপযোগী করা হবে: শিল্প উপদেষ্টা ২৪ ঘণ্টায় গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা ও কেবি কনভেনশন হল ভাড়া প্রদানকারী মোঃ বায়েজিদসহ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের আরও ১৩ নেতাকর্মী গ্রেফতার করেছে ডিবি বেনাপোল আইসিপিতে ১টি পিস্তল ও ৯৩ রাউন্ড গুলিসহ দুই ভারতীয়কে আটক করেছে বিজিবি ক্যালেন্ডার মেনে বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার বিজিবি’র অভিযানে আগস্ট-২০২৫ মাসে ১৭৭ কোটি ২১ লক্ষাধিক টাকার চোরাচালান পণ্যসামগ্রী জব্দ জাতীয় স্বার্থে বস্তুনিষ্ঠ ও জবাবদিহিমূলক গণমাধ্যম অপরিহার্য। – পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান র্টনারস ইন পপুলেশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট এর নতুন সভাপতি তিউনিসিয়া ও নতুন নির্বাহী পরিচালক নাইজেরিয়ার ড. জোসেফ

জাহাজ নির্মাণ আইন যুগোপযোগী করা হবে: শিল্প উপদেষ্টা

আলী আহসান রবি - স্টাফ রিপোর্টার / ৯ পাঠক
প্রকাশকাল সোমবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩:৪১ পূর্বাহ্ন

প্রথমবারের মতো তুরস্কে জাহাজ রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ, তুরস্কের নোপ্যাক শিপিং এন্ড ট্রেডিং লিমিটেডের কাছে এই জাহাজ রপ্তানি করেছে আনন্দ শিপইয়ার্ড অ্যান্ড স্লিপ ওয়েজ লিমিটেড,
রোরববার (৭ই সেপ্টেম্বর) নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের মেঘনা ঘাটে অবস্থিত আনন্দ শিপইয়ার্ড প্রাঙ্গণে আনুষ্ঠানিকভাবে জাহাজটি হস্তান্তর অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্প এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আনন্দ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিসেস আফরুজা বারী, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. জাহিদুল ইসলাম মিঞা, সোনারগাঁওয়ের ইউএনও ফারজানা রহমান, ঢাকাস্থ তুরস্ক দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর মি. বিলাল বেলইউত, নোপ্যাক শিপিং অ্যান্ড ট্রেডিং লি..এর প্রোপ্রাইটর মি. কেরিম ইন্স, ডিরেক্টর মি. ওমের সেমিজ, মি. ফাতিহ আসলান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, পোশাক খাতের পরে গুরুত্বপূর্ণ শিল্প হচ্ছে জাহাজ শিল্প। জাহাজ শিল্প এগিয়ে নিতে এই শিল্পে বৈচিত্র্য আনতে হবে। দেশের জাহাজ নির্মাণ আইন যুগোপযোগী করা হবে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, গার্মেন্টস শিল্পের পরে গুরুত্বপূর্ণ শিল্প হচ্ছে জাহাজ নির্মাণ শিল্প। এটাকে আমাদের সমর্থন জানাতে হবে। আমরা এই শিল্পের আইন প্রণয়ন করে দিয়ে যাবো। পরবর্তী নির্বাচিত সরকার এটা বাস্তবায়ন করবে। বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্প দেশের প্রতিরক্ষায় অংশীদার হবে। আমরা চাই এই শিল্প এগিয়ে যাক বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে আনন্দ শিপইয়ার্ডের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহিল বারী বলেন, জাহাজ নির্মাণ শিল্পে দীর্ঘ মেয়াদ অর্থায়নে সমস্যা রয়েছে। এই ক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতা দরকার। জাহাজ নির্মাণ খাত শক্তিশালী হলে দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। আব্দুল্লাহিল বারী বলেন, সোনারগাঁয়ের জাহাজ তৈরির ঐতিহ্য আছে। এই ঐতিহ্য ধরে রেখেছে আনন্দ শিপইয়ার্ড। ঐতিহ্যবাহী এই নির্মাণখাতে অভিভাবক শূন্য ছিল। এরপর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা নিয়ে এই খাত এগিয়ে গেছে। এই শিল্পে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে সমস্যা রয়েই গেছে। এক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতা দরকার।

উল্লেখ্য, তুরস্কে রপ্তানিকৃত ৩৪১ ফুট দীর্ঘ, ৫৫ ফুট প্রস্থ ও ২৫ ফুট গভীরতার ‘ওয়েস ওয়্যার’ জাহাজটি ৫৫০০ টন পণ্য পরিবহন করতে পারবে। স্টিল কয়েল, কয়লা, সার, খাদ্যশসা, এবং বিভিন্ন বিপজ্জনক মালামাল বহনে সক্ষম। আনন্দ শিপইয়ার্ড লিমিটেড এর আগে ডেনমার্ক, জার্মানি, নরওয়ে, মোজাম্বিক ও যুক্তরূজ্যসহ বিভিন্ন দেশে জাহাজ রপ্তানি করেছে।
বাংলাদেশের ‘সবচেয়ে বড়’ জাহাজ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান আনন্দ শিপইয়ার্ড সূত্রে জানা গেছে, উন্নত নকশা ও আন্তর্জাতিক মানের প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ‘ওয়েস ওয়্যার’। এটি একটি ২ হাজার ৭৩৫ হর্স পাওয়ার বা অশ্বশক্তি ইঞ্জিন দ্বারা চালিত। এটি প্রতি ঘন্টায় ১২ নট গতিতে ৫ হাজার ৫০০ টন পণ্য বহন করতে সক্ষম।
এর আগে কোম্পানিটি যুক্তরাজ্যভিত্তিক এনজিয়ান শিপিং কোম্পানি লিমিটেডে ৬ হাজার ১০০ ডিডব্লিউটি জাহাজ রপ্তানি করে, যা সে সময় বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করা সবচেয়ে বড় জাহাজগুলোর মধ্যে একটি ছিল।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে জাহাজ তৈরি শিল্প স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরে তা রপ্তানি করে বছরে ২ বিলিয়ন ডলার আয়ের পথ তৈরি সম্ভব। এছাড়াও, গভীর সমুদ্রে রাসায়নিক কারখানা স্থাপন করে জলজ উদ্ভিদ ও সামুদ্রিক শৈবাল থেকে ঔষধ কারখানার জন্য কাঁচামাল সরবরাহ সম্ভব। ফলে, দেশের ঔষধ শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কমবে ও বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে।
আনন্দ শিপইয়ার্ডের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। আজ অবধি, তারা দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় ক্লায়েন্টদের কাছে ৩৫০ টিরও বেশি জাহাজ সরবরাহ করেছে। ২০০৮ সালে আনন্দ শিপইয়ার্ড ডেনমার্কে কন্টেইনার জাহাজ ‘স্টেলা মেরিস’ রপ্তানির মাধ্যমে সমুদ্রগামী জাহাজ রপ্তানিকারক হিসেবে প্রথম আত্মপ্রকাশ করে। তারপর থেকে জার্মানি, নরওয়ে, মোজাম্বিক, যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য দেশে রপ্তানি করা হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির কারিগরি পরিচালক ড. নাজমা নওরোজ জানান, জাহাজটির নির্মাণ কাজ শেষে সকল মেশিনারি টেস্ট ট্রায়াল কাজ সম্পন্ন। সি ট্রায়াল শেষ হওয়ায় জাহাজটিকে ক্রেতার নিকট বুঝিয়ে দিতেই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। তিনি বলেন, জাহাজ নির্মাণ শিল্পখাতকে বিভিন্ন সুবিদাধি দেয়া শুধুমাত্র সময়ের দাবি নয় বরং একাধিক রপ্তানি খাতে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ একান্ত প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, জাহাজ নির্মাণ শিল্প ব্লু-ইকোনমির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত এবং এর উন্নয়ন ছাড়া ব্লু-ইকোনমি সঠিকভাবে বিকশিত হওয়া সম্ভব নয়।

৯ লাখ বর্গফুট আয়তনের আনন্দ শিপইয়ার্ডে ড্রেজার ও প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত জাহাজের পাশাপাশি একসঙ্গে ১০ হাজার টন পর্যন্ত দৈর্ঘ্যের ৮টি জাহাজ নির্মাণের সক্ষমতা রয়েছে। সার্বক্ষণিক কার্যক্রমের মাধ্যমে শিপইয়ার্ড বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণ খাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

আনন্দ শিপইয়ার্ড অ্যান্ড স্লিপওয়েজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহেল বারী বলেন, ২০২২ সালের পর আমরা জাহাজ রপ্তানি শুরু করেছি। এখন তুরস্কে যাওয়া জাহাজটি এ পর্যন্ত পাঠানো জাহাজগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং প্রযুক্তিগতভাবে সবচেয়ে উন্নত জাহাজ। তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী, একটি জাহাজের অর্থায়নের প্রায় ৮৫ শতাংশ আসে ব্যাংক গ্যারান্টির মাধ্যমে। তবে বাকি ১৫ শতাংশ ২৫-৩০ কোটি টাকার সমপরিমাণ (২.৫-৩ মিলিয়ন ডলার) – আমাদের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যবস্থা করতে হবে। এত বড় পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করা কঠিন কারণ ব্যাংকগুলি প্রায়শই এটি সরবরাহ করতে অনিচ্ছুক থাকে। ফলে উৎপাদনের সময় ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল আটকে থাকে, যার ফলে বিলম্ব হয়। তিনি আরও বলেন, দেশের জাহাজ নির্মাণ খাতের অপার সম্ভাবনা থাকলেও দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্প সুদে অর্থায়নের অভাব এ শিল্পকে কাঙ্ক্ষিত গতিতে এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

বাংলাদেশে জাহাজ নির্মাণ
বাংলাদেশে জাহাজ নির্মাণ খাতকে সম্ভাবনাময় মনে করে ২০০৮ সালে ডেনমার্কে অত্যাধুনিক কন্টেইনার জাহাজ ‘স্টেলা মেরিস’ রপ্তানি করে আনন্দ শিপইয়ার্ড। তাদের এই রপ্তানির কারণে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উদীয়মান জাহাজ নির্মাণ জাতি হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেছে। গত দেড় দশকে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন ধরনের ৩৫৬টিরও বেশি জাহাজ তৈরি করেছে। দক্ষ জনশক্তি, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং আন্তর্জাতিক মান মেনে চলা এ খাতের প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করেছে। এর মধ্যে আছে কার্গো জাহাজ, যাত্রীবাহী জাহাজ, মাল্টিপারপাস আইস-ক্লাস ভেসেল, ল্যান্ডিং ক্রাফ্ট, অফশোর প্যাট্রল ভেসেল, টাগবোট, মাছ ধরার জাহাজ, বাল্ক ক্যারিয়ার ও কনটেইনার ক্যারিয়ার।
ইতিমধ্যে দেশে থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ডেনমার্ক, জার্মান, নরওয়ে, মোজাম্বিক ও ইউকেসহ বিভিন্ন দেশে ৫০টি জাহাজ রপ্তানি করেছে।

বর্তমানে, দেশে ৩০টিরও বেশি বড় শিপইয়ার্ড রয়েছে, যার মধ্যে বেশ কয়েকটি সরাসরি আন্তর্জাতিক বাজারে জাহাজ রফতানি করে। এশিয়ার জাহাজ নির্মাণ শিল্পে চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের পর বাংলাদেশ ধীরে ধীরে তার উপস্থিতি অনুভব করছে। মাঝারি আকারের পণ্যবাহী জাহাজ, কন্টেইনার জাহাজ, ট্যাংকার ও ড্রেজার নির্মাণে দেশটি ক্রমবর্ধমান সুনাম অর্জন করছে।

যদিও প্রাথমিক ফোকাস অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণের দিকে রয়ে গেছে, গত দশকে রফতানি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় ৯০% জ্বালানি, ৭০% কার্গো এবং ৩৫% যাত্রী পরিবহন নৌপথে সম্পন্ন হয়। এই বিশাল চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন আকারের প্রায় ৩০০ শিপইয়ার্ড স্থাপন করা হলেও এর মধ্যে মাত্র ১০টিতে প্রায় তিন লাখ শ্রমিক নিয়োজিত রেখে রফতানি মানের জাহাজ নির্মাণ করা যায়।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) মতে, বর্তমানে দেশে শতাধিক জাহাজ নির্মাণ কোম্পানি এবং ১২০টিরও বেশি নিবন্ধিত শিপইয়ার্ড রয়েছে এবং উদ্যোক্তাদের অনুমান প্রায় ৩০০টি সক্রিয় শিপইয়ার্ড রয়েছে।
দেশীয় জাহাজের বাজার বার্ষিক ১০-১৫% হারে বাড়ছে, যেখানে রপ্তানি প্রতি বছর ৫-৬ শতংশের তুলনামূলকভাবে ধীর গতিতে বাড়ছে। দেশের স্থানীয় জাহাজ নির্মাণ শিল্পের বার্ষিক মূল্য প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার।
বর্তমান সক্ষমতা দিয়ে বাংলাদেশ বছরে প্রায় ২০টি জাহাজ রপ্তানি করতে পারে। আন্তর্জাতিক বাজারে, আঞ্চলিক পরিষেবার জন্য বহুমুখী জাহাজ, কার্গো ফিডার এবং যাত্রীবাহী ফেরির মতো ১২,০০০ ডিডব্লিউটি পর্যন্ত ছোট জাহাজের সেগমেন্টে দেশের শক্তিশালী সম্ভাবনা রয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *