শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৪৪ পূর্বাহ্ন
প্রভাবশালী ব্রিটিশ দৈনিক ফিনান্সিয়াল টাইমস-এর একটি নতুন ডকুমেন্টারি “বাংলাদেশ’স মিসিং বিলিয়নস, স্টোলেন ইন প্লেইন সাইট”-এ চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে, ডকুমেন্টারিতে অভিযোগ করা হয়েছে যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে।
ডকুমেন্টারিটি শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) প্রকাশ করা হয় এতে অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদদের সাক্ষাৎকার নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে এত বিপুল পরিমাণ অর্থ কীভাবে বিদেশে পাচার হলো এবং তা আদৌ ফেরত আনা সম্ভব কি না, ডকুমেন্টারিতে উল্লেখ করা হয়েছে, এই অর্থ পাচারের বড় অংশই যুক্তরাজ্যে গেছে, যা আন্তর্জাতিক দুর্নীতি নজরদারি সংস্থাগুলোর মতে, যুক্তরাজ্যের শক্তিশালী আর্থিক খাত ও রিয়েল এস্টেট বাজারের কারণে সম্ভব হয়েছে।
শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে এই অর্থ পাচারের অভিযোগ দীর্ঘদিনের, ডকুমেন্টারিতে শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার পরিবারের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে, এছাড়াও, বাংলাদেশের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর যুক্তরাজ্যে ৩০০টিরও বেশি সম্পত্তি থাকার কথা বলা হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৩৫০টি সম্পত্তি ব্রিটিশ অপরাধ দমন সংস্থা (এসসিএ) ইতোমধ্যে জব্দ করেছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার অনুমান করছে যে, শেখ হাসিনার শাসনামলে প্রতি বছর প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার দেশ থেকে পাচার হয়েছে।
এছাড়া উঠে এসেছে, রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির এমপি ও সাবেক মন্ত্রী হলেও, দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় অভিযোগ ওঠে, হাসিনা ও রেহানার পরিবার বড় বড় অবকাঠামো প্রকল্প থেকে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন, টিউলিপ সিদ্দিকও তদন্তের মুখে পড়েন ও মন্ত্রিত্ব ছাড়তে বাধ্য হন।
ডকুমেন্টারিতে আরও বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার সরকারের ঘনিষ্ঠরা সেনা গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই-এর সহায়তায় বিভিন্ন ব্যাংক দখল করে ভুয়া ঋণ দিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে, অর্থনীতিবিদদের মতে, এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় লুটতরাজ।
বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই অর্থ ফেরত আনার জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছেন, তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই বিপুল পরিমাণ অর্থ উদ্ধার করতে “বছরের পর বছর” সময় লাগবে, এছাড়াও, দুর্নীতি, জবাবদিহিতার অভাব এবং দায়মুক্তির সংস্কৃতির কারণেই ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার তীব্র অসন্তোষের জন্ম হয়, যা শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার সরকারের পতনের কারণ হয়।
শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর চলমান ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের বর্ণনাও এই ডকুমেন্টারিতে তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে পুলিশের গুলিবর্ষণ এবং সহিংসতার কারণে বিপুল সংখ্যক মানুষের মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে, অন্যদিকে, শেখ হাসিনার সমর্থকেরা এখনও এসব সহিংসতায় তাঁর ভূমিকা অস্বীকার করে।