সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ১১:২৩ অপরাহ্ন
সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, তোমাদের মত আমারও একটা স্বপ্ন আছে, একদিন এই দেশটি শিশুদের জন্য হবে। আজকের শিশুরাই আগামী দিনের দেশ পরিচালনার নেতৃত্ব দিবে।
তিনি আজ ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিশ্ব শিশু দিবস ২০২৫ ও শিশু অধিকার সপ্তাহের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ এনডিসির সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে মৎস্য প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় উপদেষ্টা ফরিদা আখতার , ইউনিসেফ প্রতিনিধি Rana Flowers, শিশু বক্তা রূপ সঞ্চারী চর্চা এবং মোঃ সামিউল ইসলাম বক্তৃতা করেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ শিশু একাডেমির মহাপরিচালক (যুগ্ম সচিব) দিলারা বেগম।
উপদেষ্টা বলেন, বিশ্ব শিশু দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘ শিশুর কথা শুনব আজ, শিশুর জন্য করব কাজ’ । এই স্লোগানে এমন একটি দেশ আমরা গড়বো বিশ্বের সকলের তাকিয়ে বলবে এই দেশটি শিশুদের জন্য। তিনি বলেন, একটি সুন্দর দেশ গড়ার জন্য আজকে আমরা যে সংগ্রাম করছি এবং তোমরা যারা গত বছর যে জুলাই-গণঅভ্যুত্থানে অকপটে অংশগ্রহণ করে বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গঠনে ভূমিকা পালন করেছ বিরত্বগাথা তৈরি করেছ, তাতে প্রমাণ হয়ে যায় তোমরাই দেশের দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছো। তিনি বলেন, এত যুগ ধরে যারা দেশ শাসন করে এসেছিলো, অন্যায়, দুর্নীতি যারা করেছে এই অপশক্তির বিরুদ্ধে আঙ্গুলি দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছো। লড়াই করে তোমরা দেশটাকে পরিবর্তন করে দিয়েছো। সত্যিকথা বলতে জুলাই আন্দোলন না হলে আমরা বুঝতেই পারতাম না আমাদের কোমলমতি ছোট শিশুরা আমাদের সোনার দেশটাকে এত ভালোবাসে , দেশের জন্য এতটা মায়া, দেশের জন্য এতটা ভাবে। তিনি বলেন, আমাদের এই জেনারেশনের শিশু কিশোররা এক একটা অকুতোভয় বীরসৈনিক। যারা কোনো অন্যায়ের আপস না করে মাথা উঁচু করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়তে জানে বাঁচতে জানে।
উপদেষ্টা বলেন, বিশ্ব শিশু দিবস এবং শিশু অধিকার সপ্তাহ ২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে আমরা একত্রিত হয়েছি বিশেষ একটি উদ্দেশ্যে- আর তাহলো শিশুদের মুখে হাসি, তাদের স্বপ্নের অনুপ্রেরণা, জীবনের মর্যাদা ও নিরাপত্তাই এ দিবসে মূল বিষয়।
উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেন, ১৯৫৪ সালে জাতিসংঘের UNICEF- ই প্রথম বিশ্ব শিশু দিবস শুরু করেছিল। শিশুদের কল্যাণ ও অধিকার সুরক্ষার জন্য বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে। এ সময় বিশ্বজুড়ে শিশুদের প্রতি ভ্রাতৃত্ব, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের গুরুত্ব ফুটে ওঠে। ১৯ ৮৯ সালে জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ (UNCRC) চারটি মূল অধিকার নির্ধারণ করে- বেঁচে থাকার অধিকার, বিকাশের অধিকার, সুরক্ষার অধিকার এবং অংশগ্রহণের অধিকার। যদিও বাংলাদেশের সংবিধান ও বিভিন্ন আইন সেগুলো নিশ্চিত করে। বাস্তবতা হলো অনেক দিকেই এসব এখনো পিছিয়ে রয়েছে। আমরা তা নিরসনে পরিশ্রম করে যাচ্ছি।
উপদেষ্টা আরো বলেন, আপনার ইতোমধ্যেই অবগত যে, আমাদের বর্তমান সরকার শিশুদের খুবই স্নেহ করেন এবং গভীর ভালোবাসেন। এজন্য তিনি স্নেহশীল সকল শিশুর জন্য নানারকম উন্নয়নমুখী কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য : শিশুভিত্তিক বিচার ব্যবস্থার জন্য আলাদা বিশেষ ‘শিশু আদালত’ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এটি আইন ও বিচার ব্যবস্থাকে শিশুর জন্য পুনর্বাসনমুখী করেছে, শাস্তির দৃষ্টিকোণ থেকে প্রগতিশীল ম্যাসেজ দিচ্ছে। ইউনিসেফ ও ইইউ এর সহায়তায়, সামাজিক কল্যাণখাতে ১২০০ জন অতিরিক্ত সমাজকর্মী বা শিশু সুরক্ষা ও হেল্পলাইন কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে, যাদের কাজ- শিশু সুরক্ষা, জরুরি সেবা এবং পরিবারের সহায়তা নিশ্চিত করা। তিনি আরো বলেন, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ILO ও MoWCA একসাথে Childcare Roadmap উদ্বোধন করে যেটি সারাদেশে সাশ্রয় সুনির্দিষ্ট এবং যোগ্য শিশুসেবা নিশ্চিত করার একটি বিস্তৃত পরিকল্পনা । এর লক্ষ্য জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে নারীর কর্মমুখী অংশগ্রহণ ও শিশুদের সুরক্ষা বৃদ্ধি করা।
তিনি বলেন, চলুন আমরা সবাই মিলে এই প্রতিজ্ঞা করি- শিশুরা নিরাপদে বেড়ে উঠুক, সুযোগ পাক, স্বপ্ন পূরণ হোক- সেই দেশটিই আমরা গড়ব এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে জুলাই আন্দোলনে নিহত ৬২ জন শিশুদের পরিবারকে সম্মাননা ও অনুদান প্রদান করা হয়।
এর আগে উপদেষ্টা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন নিউরো ডেভেলপমেন্ট প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট আয়োজিত বিশ্ব সেরিব্রাল পালসি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি দিবস ২০২৫ উপলক্ষে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন। এ সময় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সচিব ড. মোহাম্মদ আবু ইউছুফ, সেরিব্রাল পালসি সম্পন্ন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।