শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:০১ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকায় আয়োজিত ‘খুলনা বিভাগের সংকট ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বিশিষ্টজনরা খুলনা বিভাগের উন্নয়ন, বৈষম্য দূরীকরণ ও অবকাঠামো সংস্কারে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেছেন।
শুক্রবার (২১ নভেম্বর) বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে। এতে অংশ নেন সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, নীতিনির্ধারক ও বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধিরা।
সভাপতিত্ব করেন খুলনা বিভাগীয় সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু। সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক নাসির আহমাদ রাসেল। গোলটেবিল আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাবেক সচিব ও সাবেক এনবিআর চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ।
মূল প্রবন্ধে ড. মজিদ বলেন, দেশের জিডিপিতে খুলনা বিভাগের অবদান ৩২ শতাংশ হলেও অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় এই বিভাগ বহুদিন ধরে অবহেলা, বৈষম্য এবং অমনোযোগিতার শিকার। ১০ জেলা, ৫৯ উপজেলা ও ৫৬৮ ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ বৃহৎ উপকূলীয় অঞ্চল বারবার দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই স্থায়ী বেড়িবাঁধ, উপকূল সুরক্ষা, সুন্দরবন রক্ষা, কৃষিপণ্য মজুদ–বিপণন সুবিধা, মেধা লালন ও শিল্পায়নে বিশেষ উদ্যোগ প্রয়োজন।
তিনি গভীর সমুদ্রবন্দর প্রতিষ্ঠা, উপকূল উন্নয়ন বোর্ড গঠন এবং উপকূলীয় এলাকার টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণের ওপর জোর দেন।
গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য দেন- খুলনা বিভাগীয় সাংবাদিক ফোরামের উপদেষ্টা ও সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ দিদার বখত, খুলনা জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মোমরেজুল ইসলাম, যশোর এমএম কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক মিজানুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক মিজানুর রহমান, জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মাদ নাসির উদ্দিন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মেহেরপুর জেলা আমির ও মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা তাজউদ্দীন খান।আরও বক্তব্য দেন- মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী নাজমুল হুদা, বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের সচিব মোহাম্মদ আব্দুস সবুর, অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা মেইলের নির্বাহী সম্পাদক ও বাংলাদেশ পার্লামেন্ট জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হারুন জামিল, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি মোরসালিন নোমানী, সাংবাদিক সিরাজুল ইসলাম, ফোরামের সহ–সভাপতি খালিদ সাইফুল্লাহ, সিনিয়র সদস্য আশীষ কুমার দে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- খুলনা বিভাগীয় সাংবাদিক ফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ রিজভী নেওয়াজ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তানভীর আহমেদ, অর্থ সম্পাদক রহমান আজিজ, সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুর রহমান, দফতর সম্পাদক আব্দুল হালিম, ক্রীড়া সম্পাদক অন্তু মুজাহিদ এবং কল্যাণ সম্পাদক গাজী আকতার।
বক্তারা বলেন, উপকূলীয় এলাকা হওয়ায় খুলনা বিভাগ বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কৃষিপণ্য সারাদেশে সরবরাহ করলেও কৃষির উন্নয়নে কোনো বড় উদ্যোগ নেই। পলি সংরক্ষণ করতে পারলে আরও এক বাংলাদেশ তৈরি সম্ভব হতো; কিন্তু সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ডে কোটি টন পলি হারিয়ে যায়। সুন্দরবনকে সঠিকভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে বিশাল প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ সম্ভব।
খুলনা বিভাগীয় সাংবাদিক ফোরামের উপদেষ্টা ও সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ দিদার বখত বলেন, সাংবাদিকদের সঠিকভাবে কলম চালাতে পারলে দেশের উন্নয়নে যুগান্তকারী পরিবর্তন সম্ভব।
অধ্যাপক ডা. মোহাম্মাদ নাসির উদ্দিন এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নয়নে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানান।প্রেস কাউন্সিলের সচিব আব্দুস সবুর বলেন, উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সকলকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।
ঢাকা মেইলের নির্বাহী সম্পাদক হারুন জামিল বলেন, এ ধরনের আলোচনা নিয়মিত হওয়া জরুরি এবং ঢাকায় খুলনা বিভাগের মানুষকে আরও বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে হবে। কাজের ক্ষেত্রে আমাদের তাগিদ বাড়াতে হবে।
সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে হারুন জামিলের ভূমিকার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, খুলনা বিভাগের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সাংবাদিক, সচিব, নীতিনির্ধারক এবং পেশাজীবীদের সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া এখন সময়ের দাবি।
গোলটেবিল বৈঠকে খুলনা বিভাগের দীর্ঘদিনের বৈষম্য দূরীকরণ, উন্নয়ন বাজেট বাড়ানো, উপকূলীয় সুরক্ষা, শিল্পায়ন, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং সুন্দরবনের সুরক্ষা নিশ্চিত–এই পাঁচটি দফা সুপারিশে সবাই একমত পোষণ করেন