বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:২৩ পূর্বাহ্ন
স্থানীয় সরকার আইন অনুসারে তামাক ও সিগারেট বিক্রিতে লাইসেন্স গ্রহণ বাধ্যতামূলক। কিন্তু অধিকাংশ সিগারেট ও তামাক বিক্রেতার লাইসেন্স না থাকায় তারা তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘন করেছে । ভোক্তা অধিকার আইন লঙ্ঘন করে নির্ধারিত মূল্যের অতিরিক্ত মূল্যে সিগারেট বিক্রিসহ অবৈধ সিগারেটও বিক্রি করছে। এভাবে প্রতিনিয়ত আইনভঙ্গের পরও এ সকল তামাক ও সিগারেট বিক্রিতাকে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। সিগারেট কোম্পানিগুলো সুকৌশলে তামাক ও সিগারেট বিক্রিতাদের ব্যবহার করে কর ফাঁকি ও আইন লঙ্ঘন করে আসছে, আর এ জন্যই সিগারেট কোম্পানিগুলো নিজেদের স্বার্থে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে সিগারেট বিক্রিতে নিবন্ধনের বিরোধীতা করে আসছে। স্থানীয় সরকার গাইডলাইন অনুসারে ৪৩ পৌরসভায় ৪১৫৫টি লাইসেন্স হয়েছে যাতে সরকার ৮৩ লাখ ২০ হাজার টাকা রাজস্ব পেয়েছে; স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান পেয়েছে ২০ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। দেশে ১ লাখ ৫০ হাজার সিগারেট/ তামাক বিক্রেতা আছে, লাইসেন্স হলে সরকারের রাজস্ব আয় হবে ৩০ কোটি টাকা পরিমাণ রাজস্ব লাভ হবে, একই সাথে চোরাচালান এবং অবৈধ কর ফাঁকি রোধ করা সম্ভব হবে।
আজ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ সকাল ১১ টায় বিজয়নগরস্থ ফার্স হোটেলের সভা কক্ষে অসরকারী সংস্থা এইড ফাউন্ডেশন এবং বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের যৌথ উদ্যোগে “স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের তামাক নিয়ন্ত্রণে নির্দেশিকা বাস্তবায়নের সফলতা ও চ্যালেঞ্জ: অভিজ্ঞতা বিনিময়” শীর্ষক একটি সভা বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের সমন্বয়ক জনাব সাইফুদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অতিথি হিসাবে আলোচনা করেন জনাব মো: মাহমুদুল হাসান, এনডিসি, মহাপরিচালক, পরিকল্পনা, পরিবীক্ষণ, মূল্যায়ন ও পরিদর্শন অনুবিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগ, জনাব মো. আখতারউজ-জামান, মহাপরিচালক, এনটিসিসি (যুগ্ম সচিব), স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, জনাব মোহাম্মদ হামিদুর রহমান খান, সাবেক সিনিয়র সচিব, ন্যাশনাল কনসালটেন্ট ভাইটাল ষ্ট্রাটেজিস, জনস্বাস্থ্য বিষয়ক নীতি বিশ্লেষক জনাব এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন। এইড ফাউন্ডেশনের প্রকল্প পরিচালক শাগুফতা সুলতানা প্রেজেন্টেশন উপস্থাপনের মাধ্যমে এলজিআই গাইডলাইনটি বাস্তবায়নের বর্তমান চিত্র তুলে ধরেন। সভাটি সঞ্চালন করেন এইড ফাউন্ডেশনের সিনিয়র প্রোগাম অফিসার আবু নাসের অনীক। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন তামাক নিয়ন্ত্রণে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ।
সভায় আলোচকগণ আরো বলেন, সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের কার্যকর ভূমিকায় জানুয়ারী ২০২১ এ ‘স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন নির্দেশিকা’ প্রকাশিত হয়। তামাকজাত দ্রব্যের (বিশেষকরে সিগারেট/বিড়ি) যত্রতত্র ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও বিক্রয় সীমিতকরণে ‘স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন নির্দেশিকা’ একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন নির্দেশিকা’র ৮ এর ৮.১ এ বলা হয়েছে,‘তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়কেন্দ্র বা যেখানে তামাকজাত দ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় হবে তার জন্য আবশ্যিকভাবে পৃথক লাইসেন্স প্রদান করা এবং প্রতি বছর নির্দিষ্ট ফি প্রদান সাপেক্ষে আবেদনের মাধ্যমে উক্ত লাইসেন্স নবায়ন করা।’ বর্তমান অবস্থায় তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয়ে কোন প্রকার নিয়ন্ত্রণ নেই। লাইসেন্সিং ব্যবস্থা তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয়কে সীমিতকরণ করতে সাহায্য করছে। বিক্রয় সীমিত করা সম্ভব হলে এর ব্যবহারও একসময় কমে আসতে বাধ্য।
৩৭ টি পৌরসভায় ইতিমধ্যে তামাক বিক্রেতাদের জন্য লাইসেন্স প্রদান প্রক্রিয়া চালু করেছে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৪,১৫৫ জন বিক্রেতাকে লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে, যা তামাক নিয়ন্ত্রণে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি নির্দেশ করে। লাইসেন্সিং এর বিষয়ে নির্দেশিকায় যে সমস্ত শর্তারোপ করা হয়েছে সেগুলোর প্রতিপালন নিশ্চিত করার মাধ্যমে তামাকজাত দ্রব্যের (বিশেষকরে সিগারেট/বিড়ি) যত্রতত্র ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, বিক্রয় সীমিতকরণে সরাসরি প্রভাব পড়ছে। নির্দেশিকায় ৮.৫ এ বলা হয়েছে, সকল ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের আশেপাশে ১০০ মিটারের মধ্যে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয়ের জন্য লাইসেন্স প্রদান করা যাবে না।
তামাক কোম্পানিগুলোর অন্যতম টার্গেট থাকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশেপাশে যাতে সিগারেট বিক্রি হয় তার ব্যবস্থা করা। তারা প্রধান ভোক্তা বানাতে চায় শিশু-কিশোর-যুবকদের। কারণ তাদের একবার সিগারেট ধরিয়ে দিতে পারলে দীর্ঘ মেয়াদী ভোক্তা তৈরি হয়ে যায়। গাইডলাইনের উল্লেখিত ধারা বাস্তবায়িত হওয়ার মাধ্যমে তামাক কোম্পানীর এই অপতৎপরতাকে বাধাগ্রস্থ করা সম্ভব হচ্ছে।
৬টি সিটি কর্পোরেশন, ৪৩টি পৌরসভা এবং ৭টি ইউনিয়ন পরিষদে—শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ১০০ মিটারের মধ্যে তামাকজাত পণ্য বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার উদ্যোগ ইতোমধ্যে ৫৯% এলাকায় বাস্তবায়িত হয়েছে এবং এই সমস্ত জায়গাতে সিগারেট বিক্রি সীমিতকরণ করা সম্ভব হওয়াতে একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থীদেরকে তামাকজাত দ্রব্য থেকে দূরে রাখা সম্ভব হয়েছে। লাইসেন্সিং ব্যবস্থা কার্যকরের মাধ্যমে একটি শহরে মোট কতোটি দোকানে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় হচ্ছে তার ডাটা বেজ তৈরি হয়ে যাচ্ছে । ফলশ্রুতিতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন কার্যকর করা অনেক বেশি সহজ হচ্ছে। বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে আরো বেশিমাত্রায় প্রয়োগযোগ্য এবং শক্তিশালীকরণের লক্ষ্যে তামাজত দ্রব্যের বিক্রেতাদের নিবন্ধের আওতায় আনা এখন একটি সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
একটি সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার জন্য এসডিজি-৩ বাস্তবায়নে তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ অপরিহার্য একটি পদক্ষেপ। আর সেই পদক্ষেপকে বাস্তবায়ন উপযোগী হতে পারে তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রেতাদেরকে নিবন্ধণের আওতায় আনার মাধ্যমে। পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য রক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য মন্ত্রাণালয়ের প্রস্তাব বাস্তবায়নে অর্থ, বানিজ্যসহ অপরাপর সকল মন্ত্রণালয়ের সাংবিধানিক দায়িত্ব।