মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ১১:১৯ পূর্বাহ্ন
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আজ সোমবার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, ঢাকায় “Research to Market: Strengthening Bangladesh’s Innovation Ecosystem through Academia–Industry–Research Partnerships” শীর্ষক গোলটেবিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে বেসরকারি ও সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি শিল্প খাত, গবেষক উদ্ভাবক ও নীতিনির্ধারকগণ অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বলেন, “গবেষণা ও উদ্ভাবনকে জাতীয় উন্নয়ন অগ্রাধিকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত করতে হবে। আমরা এমন এক সময়ের দিকে এগুচ্ছি যেখানে বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি ও প্রযুক্তির প্রয়োগই অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার মূল নির্ধারক হবে।”
মাননীয় উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, “আমাদের গবেষণা, উদ্ভাবন ও শিল্পের মধ্যে সেতুবন্ধন গড়ে তুলতে হবে। গবেষণায় বিনিয়োগ করা সরকারের অর্থ যেন উৎপাদনশীলতা, কর্মসংস্থান ও টেকসই উন্নয়নে অবদান রাখে সে বিবেচনায় গবেষণা, উদ্ভাবন ও শিল্পের মধ্যে আন্ত:সংযোগ জোরদারে মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগগুলো সময়োপযোগী এবং এর জন্য নীতিগত ও আর্থিক প্রনোদনা প্রয়োজন বলে জানান।
মাননীয় উপদেষ্টা আরও বলেন, বাংলাদেশে কৃষি, পশুপালন ও মৎস্য খাতে আমরা বিজ্ঞানকে সরকারি পর্যায়ে যতটা ভালোভাবে কাজে লাগাতে পেরেছি অন্যান্য খাতে ততটা এখনও ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারিনি। পিছিয়ে থাকা এ সকল ক্ষেত্রসহ সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিজ্ঞানীদের সাথে নীতিনির্ধারক, সরকার, গবেষক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয়ের উপর গুরুত্বারোপ করেন। নতুন নতুন উদ্ভাবন ও গবেষণা কাজে বিজ্ঞানীদের আরও মনোনিবেশ করার ওপর তিনি আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় বাণিজ্য সচিব জনাব মাহবুবুর রহমান বলেন, গবেষণার ফলাফল বাজারজাতকরণের সুযোগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে আমরা যথেষ্ট পিছিয়ে আছি। নতুন উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে আমাদের গুরুত্ব ও উৎসাহ প্রদানের সুযোগ তৈরি করতে হবে।
বক্তারা বলেন, একাডেমিয়া–ইন্ডাস্ট্রি–রিসার্চের সমন্বয় উদ্ভাবন, প্রযুক্তি স্থানান্তর ও গবেষণার বাণিজ্যিকীকরণের সবচেয়ে কার্যকর মাধ্যম। এ সহযোগিতা অর্থনৈতিক রূপান্তর, রপ্তানি বৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করে। দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানি, সিঙ্গাপুর ও ভারতের মতো দেশগুলোর অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বক্তারা বলেন, সরকার–শিল্প প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার মাধ্যমেই এদেশেও উচ্চপ্রযুক্তি খাতের বিকাশ সম্ভব। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও স্থানীয় বাস্তবতায় উপযোগী এমন মডেল গড়ে তোলার প্রয়োজন রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের জাতীয় গবেষণা ও উন্নয়ন (R&D) ব্যয় আঞ্চলিক দেশগুলোর তুলনায় কম। গবেষণার ক্ষেত্রে প্রকাশনা বাড়লেও শিল্পে তার ব্যবহার সীমিত, আর বেসরকারি খাতও এখনও গবেষণায় বড় পরিসরে বিনিয়োগে সক্ষমতা অর্জন করেনি। বক্তারা বলেন, যৌথ গবেষণা, নীতিগত প্রণোদনা ও প্রযুক্তি সহায়তা বৃদ্ধি করলেই এই ঘাটতি পূরণ সম্ভব। এ ক্ষেত্রে বক্তারা জাতীয় ইনোভেশন কাউন্সিল গঠনে ICT, AI Technology ব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব আরোপ করার জন্য তাগিদ প্রদান করেন।
সভাপতির বক্তব্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব মো. আনোয়ার হোসেন বলেন-“বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এখন শুধু বিজ্ঞান সংক্রান্ত নীতিমালা দেখভাল করে না; এটি ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতা, রপ্তানি বৈচিত্র্য ও উদ্ভাবন নির্ভর প্রবৃদ্ধির এক অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে। আমাদের লক্ষ্য গবেষণাকে অর্থনৈতিক শক্তিতে রূপ দেওয়া এবং উদ্ভাবনকে জীবনের অংশ করে তোলা।”
বিজ্ঞান সচিব আরও বলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্প্রতি বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে যার মধ্যে রয়েছে সরকারি গবেষণাগার ও সরঞ্জাম বেসরকারি গবেষকদের জন্য উন্মুক্ত করা, বেসরকারি খাতের সাথে যৌথ গবেষণা ও ফেলোশিপ প্রদান, স্থানীয় উদ্ভাবকদের উৎসাহ দিতে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে “Innovation Fair” আয়োজনের পরিকল্পনা, প্রবাসী বিজ্ঞানীদের সঙ্গে গ্লোবাল নেটওয়ার্ক গঠন, এবং উদীয়মান প্রযুক্তি নিয়ে কাজের জন্য Frontier Technology Cell প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বিজ্ঞানী ও গবেষকদের ডাটাবেজ, তাদের প্রকাশনা, Research Field, Research Interest ইত্যাদি বিষয়ের সম্মিলিত তথ্যাদি একই প্লাটফরমে আনা হয়েছে এবং services.most.gov.bd প্লাটফরম তৈরী করা হয়েছে। বর্তমানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ও আওতাধীন সংস্থাসমূহের মধ্যে সীমাবদ্ধ বিষয়াদি থাকলে শীঘ্রই বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ও গবেষকদের তথ্যাদি লিপিবব্ধ করা হবে।
এ ছাড়াও, আজকের আয়োজনের সারসংক্ষেপ তৈরি করে নীতিগত সংস্কার ও প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তার সুপারিশমালা শীঘ্রই প্রনয়ন করা হবে। একই সঙ্গে, Ministry of Science and Technology–Industry–Academia Working Group গঠন করে কিছু সম্ভাবনাময় খাতে পাইলট প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে।
গোলটেবিল বৈঠকে বিভিন্ন শিল্প ও শীর্ষস্থানীয় সংস্থার নেতৃবৃন্দ, বায়োটেকনোলজি, ফিসারিজ সেক্টর, ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রতিনিধি, সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসি, শিক্ষকমন্ডলী, সরকারি পর্যায়ের কর্মকর্তা, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন ।