শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:৪৯ পূর্বাহ্ন
দেশের পোশাক তৈরি খাতে কর্মরত শ্রমিকদের প্রায় ৩২ শতাংশ ন্যূনতম মজুরির কম আয় করেন এবং ৭৮ শতাংশ শ্রমিক পরিবারের জন্য জোগাতে পারেন না পর্যাপ্ত খাদ্য ।ঋণের জালে আটকা পড়েছেন প্রতি আটজনের একজন শ্রমিক । সাব-কন্ট্রাক্টেড ও মিশ্র ধরনের কারখানায় ১২ ঘণ্টার শিফট বা অতিরিক্ত কাজ সাধারণ।
বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশনের (বিএলএফ) “বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে জবরদস্তিমূলক শ্রম ও শিশুশ্রম: ঝুঁকি চিহ্নিতকরণ ও সমাধানে দিকনির্দেশনা” শীর্ষক এক জরিপে এসব তথ্য জানানো হয়। মঙ্গলবার রাজধানী একটি হোটেলে জরিপের প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। গত দুই বছরে জরিপে প্রায় ২ হাজার শ্রমিকের উপর জরিপ চালায় তারা।
জরিপে উল্লেখ করা হয়, পোশাক সরবরাহ শৃঙ্খলের নিম্নস্তরে এখনো জবরদস্তিমূলক শ্রম ও শিশুশ্রম বিদ্যমান। শিশুশ্রমিকদের প্রায় ৮০ শতাংশ সাব-কন্ট্রাক্টেড বা মিশ্র চুক্তিভিত্তিক কারখানায় কাজ করে। তাদের ৯৯ শতাংশ সপ্তাহে ৩৬ ঘণ্টার বেশি কাজ করে এবং চাকরিতে জয়েন করার ক্ষেত্রে বয়স-সংক্রান্ত নথি জাল করার ঘটনাও খুবই সাধারণ বিষয়। চট্টগ্রাম অঞ্চলে শিশুশ্রমের হার ঢাকার তুলনায় বেশি পাওয়া গেছে। আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো, সাক্ষাৎকারে অংশ নেয়া ৯৮ শতাংশ শিশুশ্রমিক বর্তমানে স্কুলে যায় না, যার প্রধান কারণ আর্থিক সংকট।
প্রতিবেদনটি সকল খাতে ন্যায্য জীবিকা নির্বাহযোগ্য মজুরি (ষরারহম ধিমব) বাস্তবায়নের সুপারিশ তুলে ধরেছে। কারণ অর্থনৈতিক কষ্টই শিশুশ্রম ও জোরপূর্বক শ্রমের মূল কারণ। পাশাপাশি শিশুদের শিক্ষা অব্যাহত রাখার সুযোগ নিশ্চিত করতে দেয়া হয়েছে একটি বিশেষ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের প্রস্তাব , কাজ করতে পারে যাতে তারা নিরাপদ ও নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে।
গবেষণাটি বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশন (বিএলএফ) ও যুক্তরাজ্যের নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাইটস ল্যাব যৌথ উদ্দ্যোগে গুডউইভ-এর সহায়তায় এবং যুক্তরাজ্য সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে বিএলএফ-এর প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর এএইচএম মোরশেদ স্বাগত বক্তব্য রাখেন। গবেষণার পটভূমি তুলে ধরেন বিএলএফ-এর সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার ইয়াসিন আরাফাত। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন গুডউইভের কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর শাহিনুর রহমান। গবেষণার মূল ফলাফল তুলে ধরেন বিএলএফ-এর প্রোগ্রাম অফিসার মো. জুবায়ের আলম।
এ সময় জানানো হয়, গবেষণার প্রধান উদ্দেশ্য, বাংলাদেশের পোশাক খাতে জবরদস্তিমূলক শ্রম ও শিশু শ্রমের অস্তিত্ব লিপিবদ্ধ করা। এছড়া অন্যান্য উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে-অদৃশ্যমান এবং অনিবন্ধিত সাব-কন্ট্রাক্ট কারখানাগুলোর বিস্তারিত পর্যালোচনা এবং পোশাক খাতে হোম-বেজড উৎপাদন কার্যক্রমের অস্তিত্ব নথিভুক্ত করা।
অনুষ্ঠানের বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ যখন এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশের) থেকে উত্তরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং জিএসপি+ বাণিজ্য সুবিধা পেতে চায়, তখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের ফোর্সড লেবার অ্যাক্ট-এর প্রেক্ষিতে, পোশাক শিল্পের সরবরাহ চেইন থেকে জবরদস্তিমূলক শ্রম ও শিশুশ্রম শ্রম নির্মূল করা দরকার।
তারা সরকার, শিল্পখাতের অংশীজন এবং আন্তর্জাতিক সহযোগীদের যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পকে আরও নৈতিক, মানবিক ও টেকসইভাবে এগিয়ে নেয়ার আহ্বান জানান।