রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ০২:১৫ পূর্বাহ্ন
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় সমাবর্তন আজ উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি আর আবরার। অনুষ্ঠানের শুরুতে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। একই সঙ্গে ব্রিটিশবিরোধী তেভাগা আন্দোলনের পথিকৃৎ হাজী মোহাম্মদ দানেশের স্মৃতিকে স্মরণ করা হয়, যার নামধারী এ বিশ্ববিদ্যালয় আজ দেশের উচ্চশিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি আর আবরার উল্লেখ করেন, ফ্যাসিবাদী শক্তির দমননীতি অতিক্রম করে শিক্ষার্থীরা যে সাহস, মনোবল ও দেশপ্রেম প্রদর্শন করেছে তা ইতিহাসে অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। ড. সি আর আবরার তাঁর বক্তব্যে বলেন,
“দেশ আজ নতুন সূচনার পথে। দীর্ঘ দেড় দশকের দমন-পীড়নের অবসান ঘটিয়ে আমরা একটি মুক্ত ও প্রাণবন্ত পরিবেশে ফিরেছি। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে তরুণ প্রজন্ম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাহসী ভূমিকা দেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।”
তিনি আরো বলেন, “শিক্ষাঙ্গনকে মুক্ত করতে আমাদের শিক্ষার্থীদের আত্মত্যাগ, প্রতিবাদ ও নেতৃত্ব জাতিকে নতুন দিগন্তে পৌঁছে দিয়েছে।”
দ্বিতীয় সমাবর্তনে এবার স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি মিলিয়ে আট হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী ডিগ্রি অর্জন করেন। বক্তারা গ্র্যাজুয়েটদের সামনে থাকা দায়িত্ব, বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ এবং নৈতিক নেতৃত্বের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
উচ্চশিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন ও যুগোপযোগী গবেষণার মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে মর্যদার আসনে প্রতিষ্ঠিত সরকারের উদ্যোগ সম্পর্কে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, “দেশের সীমিত সম্পদের মধ্যেও গবেষণা উন্নয়নে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যুগান্তকারী উদ্যোগ নিয়েছে।”
তিনি শিক্ষকবৃন্দকে গবেষণা জোরদার করা, শিক্ষার্থীদের যুক্ত করা এবং নতুন জ্ঞানের অনুসন্ধানে আরও অগ্রণী ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানান।
ড. আবরার বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের উদ্দেশে বলেন, “১৮ কোটি মানুষের কষ্টার্জিত অর্থে পরিচালিত এই বিশ্ববিদ্যালয় আপনাদের কাছে একটি পবিত্র আমানত। প্রশাসনিক, আর্থিক ও একাডেমিক ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সময়ের দাবি।”
তিনি শিক্ষা ও গবেষণার সব ক্ষেত্রে দায়িত্বশীলতা, সততা এবং নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। ডিগ্রি অর্জনকারী নবীন গ্র্যাজুয়েটদের অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, “এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে আপনাদের শিক্ষকদের অক্লান্ত পরিশ্রম। দেশের উন্নয়ন, গণতন্ত্র ও মানবিক সমাজ নির্মাণে তোমরাই হবে অগ্রপথিক।”
পরিশেষে তিনি হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারাবাহিক সাফল্য, সুনাম ও অগ্রযাত্রার জন্য শুভকামনা জানান।
অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল জনাব মোঃ আসাদুজ্জামান। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজিমউদ্দিন খান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ এনামউল্যা। এ সময়ে প্রো-ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ শফিকুল ইসলাম সিকদার, ট্রেজারার প্রফেসর ড. এম. জাহাঙ্গীর কবির, রিজেন্ট বোর্ড এবং একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যবৃন্দসহ শিক্ষক-কর্মকর্তাবৃন্দ, আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ এবং বিপুল সংখ্যক গ্র্যাজুয়েট উপস্থিত ছিলেন।