শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:২৯ অপরাহ্ন

শিরোনাম
সাধারণ শিক্ষার সাথে দ্বীনি শিক্ষার সমন্বয় করা না হলে মানুষ অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে যেতে পারে। ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ.ফ.ম. খালিদ হোসেন বলেছেন স্বার্থে পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় এখনই সর্বোচ্চ মনোযোগ দিতে হবে। – পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং টোবগে ঢাকায় পৌঁছেছেন খুলনা বিভাগের উন্নয়নচ্যালেঞ্জে বিশিষ্টজনদের ৫ দফা সুপারিশ মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আগামী ২৫ নভেম্বর ২০২৫ থেকে ১০ ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত ১৬ দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ পালিত হবে। স্কুল শিক্ষার্থীদের নিয়ে হাইজিন ক্যাম্পেইন শুরু করলো লায়ন কল্লোল দ্য ওয়েস্টিন ঢাকা আয়োজন করছে “টেস্ট অফ অ্যারাবিয়া” – আরব বিশ্বের আসল স্বাদ ও সমৃদ্ধ রন্ধন ঐতিহ্যের এক অনন্য উৎসব প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপার্সনের সৌজন্য সাক্ষাৎ আলেমদেরকে রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসতে হবে          -ধর্ম উপদেষ্টা সশস্ত্র বাহিনী দিবস আজ ২১ নভেম্বর ২০২৫

যেভাবে সম্ভব কান্টের শান্তির দর্শন: বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের উন্নতি

মোঃ সিকান্দার আলী / ২০৮ পাঠক
প্রকাশকাল শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:২৯ অপরাহ্ন

বাংলাদেশ বর্তমানে এক সংকটময় কাল অতিক্রম করছে, যেখানে একদিকে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের প্রচেষ্টা চলছে। অন্যদিকে দেশের সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ক্রমে অবনতির দিকে যাচ্ছে।

সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বর্তমান সরকার নতুন একটি সংবিধান প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে, যা প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, সংসদ, নির্বাহী ও বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করতে এবং আইনসভার সামগ্রিক কাঠামো নির্ধারণ করতে সহায়তা করবে। একই সময়ে, বিশ্ব বর্তমানে গাজায় ও ইউক্রেনে দুটি বড় সংঘাত প্রত্যক্ষ করছে, যা কোনো না কোনোভাবে বিশ্বের মানুষের ওপর প্রভাব ফেলছে।

এই প্রেক্ষাপটে হঠাৎই ইমানুয়েল কান্টের শান্তির দর্শনের কথা মনে পড়ল এবং তৃতীয়বারের মতো তাঁর গুরুত্বপূর্ণ রচনা, ‘আ পারপেচুয়াল পিস: আ ফিলোসফিক্যাল স্কেচ’ পড়তে শুরু করলাম। ‘আ পাপেচুয়াল পিস (১৭৯৫)’ রাজনৈতিক দর্শনের ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ, যা বিভিন্ন দেশের মধ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য একটি কাঠামো প্রদান করে।

এই বইয়ে কান্ট যুদ্ধ এড়ানোর ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবহারিক ও নৈতিক নির্দেশনা উপস্থাপন করেছেন। পশ্চিমা আধুনিক দর্শনের প্রভাবশালী দার্শনিক কান্ট ১৭২৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং একাধিক যুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, ভবিষ্যতেও যুদ্ধ অনিবার্য। এমন আশঙ্কাই সম্ভবত তাঁকে যুদ্ধ–সম্পর্কিত তত্ত্ব এবং তা প্রতিরোধের জন্য বাস্তবসম্মত ব্যবস্থা প্রস্তাব করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল।

বইটিতে কান্ট এমন সব ধারণা উপস্থাপন করেছেন, যা পরবর্তী সময় গণতান্ত্রিক, বাণিজ্যিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শান্তির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। তাঁর বইটি আধুনিক গণতান্ত্রিক শান্তিতত্ত্বের সঙ্গে মিল খুঁজে বের করে। কারণ, তিনি প্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্রগুলো নিয়ে আলোচনা করেন, যাকে তিনি আইনসভা ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার বিভাজনসহ প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেন।

কান্ট যুক্তি দেন, প্রজাতন্ত্রগুলো স্বাভাবিকভাবেই একে অপরের সঙ্গে শান্তিতে থাকবে। কারণ, অন্যান্য ধরনের সরকারের তুলনায় তাদের শান্তিবাদের প্রতি বেশি ঝোঁক থাকে। তবে, কান্ট এ-ও বলেন যে কেবল প্রজাতন্ত্রী সরকারই স্থায়ী শান্তি নিশ্চিত করতে পারে না। সার্বজনীন উদারতা ও বন্ধুত্বের নীতিতে গঠিত মুক্ত রাষ্ট্রের ফেডারেশন চিরস্থায়ী শান্তিতে পৌঁছাতে পারে, কিন্তু তার জন্য কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে।

এসব শর্তেরই একটি রূপরেখা প্রফেসর কান্ট দিয়েছেন তাঁর ‘পাপেচুয়াল পিস’ তথা ‘চিরস্থায়ী শান্তি’শীর্ষক বইয়ে, যা দর্শনশাস্ত্রে ছয় দফা কর্মসূচি হিসেবে খ্যাত।
এই ছয়টি নীতি নিম্নরূপ:
১. গোপন চুক্তি নয়: কান্ট জাতিগুলোর মধ্যে প্রতারণা ও অবিশ্বাস রোধে আন্তর্জাতিক চুক্তিতে স্বচ্ছতার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
২. স্থায়ী সেনাবাহিনী নয়: তিনি স্থায়ী সামরিক বাহিনী বিলুপ্তির পক্ষে যুক্তি দেন। বলেন, তাদের সেনাবাহিনীর অস্তিত্ব, শান্তির জন্য একটি স্থায়ী হুমকি সৃষ্টি করে এবং সংঘাতের সম্ভাবনাকে উসকে দেয়।
৩. সামরিক উদ্দেশ্যে জাতীয় ঋণ নয়: যুদ্ধের অর্থায়নের জন্য জাতিগুলোর ঋণ নেওয়া এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ, এটি অর্থনৈতিক শোষণ ও দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতকে উৎসাহিত করে।
৪. অন্যান্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ নয়: জাতীয় সার্বভৌমত্বকে সম্মান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোকে অন্যদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৫. ভবিষ্যতের আস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, এমন কোনো শত্রুতামূলক কাজ নয়: জাতিগুলোকে এমন কর্মকাণ্ড এড়িয়ে চলতে হবে, যা আস্থা নষ্ট করে এবং ভবিষ্যতের শান্তি আলোচনাকে বাধাগ্রস্ত করে।
৬. জোরপূর্বক সংযুক্তি নয়: বলপ্রয়োগের মাধ্যমে আঞ্চলিক সম্প্রসারণ অন্যায্য এবং আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য এটি নিষিদ্ধ করা উচিত।

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে এসব নীতি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। উদাহরণস্বরূপ, দুই দেশের মধ্যে কিছু চুক্তি গোপনীয়তার সঙ্গে সম্পাদিত হয়েছিল, যার ফলে জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক অবিশ্বাস তৈরি হয়েছিল। স্বচ্ছতার এই অভাব ভারত ও বাংলাদেশ—উভয় সরকারের বিরুদ্ধেই ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। হাসিনা সরকার অপ্রয়োজনীয় মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান এবং অন্যান্য সামরিক অস্ত্র কেনার জন্য প্রচুর বিদেশি ঋণ নিয়েছে। বাংলাদেশের এই অবস্থা সরাসরি কান্টের তৃতীয় নীতির সঙ্গে মিলে যায়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *