শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫, ০৭:২৫ পূর্বাহ্ন
ইসরায়েলের অবরোধের কারণে গাজায় খাবার-সংকট অসহনীয় অবস্থায় পৌঁছেছে। উপত্যকাটিতে দুই বছরের কম বয়সী ১ লাখের বেশি শিশু অপুষ্টির কারণে মৃত্যুর চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে গাজার কিছু এলাকায় প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা করে হামলা বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।
টানা ১১ সপ্তাহ অবরোধের পর মে মাসের শেষের দিক থেকে গাজায় খুব সামান্য পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এ ছাড়া ইসরায়েলে ও যুক্তরাষ্ট্র পরিচালিত বিতর্কিত ত্রাণকেন্দ্রে খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে হত্যার শিকার হচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজার তিন ভাগের এক ভাগ মানুষ দিনের পর গাজায় খাবার-সংকটের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী শিশুরা। উপত্যকাটির জনসংযোগ কার্যালয় থেকে গতকাল শনিবার জানানো হয়েছে, ফর্মুলা দুধ সরবরাহ না করা হলে আসন্ন মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে দুই বছরের কম বয়সী ১০ লাখের বেশি শিশু। তাদের মধ্যে ৪০ হাজার শিশুর বয়স এক বছরের কম। ফর্মুলা দুধের অভাবে শিশুদের পানি খাওয়াচ্ছেন মায়েরা।
চরম দুর্দশায় রয়েছেন গাজার মায়েরাও। অপুষ্টির কারণে শিশুদের বুকের দুধ খাওয়াতে পারছেন না তাঁরা। এমনই একজন জয়নব। তিনি বলেন, ‘এই অনাহারের মধ্যেই আমি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ি। যখন সন্তানের জন্ম দিই, তখনো অনাহারে ছিলাম। গত ৯ মাসে একটি ডিমও খেয়েছি কি না, মনে পড়ে না। এর বেশি আর কী বলব?’
খাবারের এই হাহাকারের মধ্যে আজ রোববার অনাহারে আরও পাঁচ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, গত মার্চে গাজায় ইসরায়েলের অবরোধ শুরু পর থেকে এ নিয়ে অনাহার ও অপুষ্টিতে অন্তত ১২৭ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হলো। তাঁদের মধ্যে ৮৫ জনের বেশি শিশু। এ ছাড়া ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের হামলায় উপত্যকাটিতে নিহত হয়েছেন প্রায় ৬০ হাজার ফিলিস্তিনি।দিন না খেয়ে রয়েছেন।ইসরায়েলের অবরোধের কারণে গাজায় সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি নিয়ে শুরু থেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে জাতিসংঘ। উপত্যকাটিতে ‘ব্যাপক হারে দুর্ভিক্ষ’ ছড়িয়ে পড়ছে বলে গত বুধবার সতর্ক করেছিল শতাধিক মানবাধিকার সংস্থা। এ ছাড়া গাজায় দেখা দেওয়া ‘ভয়াবহ বিপর্যয়’ থামানোর জন্য ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে গত শুক্রবার বিবৃতি দিয়েছিল যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি।
এএফপি জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক চাপের মুখে আজ গাজার কিছু এলাকায় প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা করে ‘কৌশলগত সামরিক কর্মকাণ্ড’ স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। তারা বলেছে, উপত্যকার আল মাওয়াসি, দেইর আল-বালাহ ও গাজা নগরীতে সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত হামলা চালানো হবে না। এ সময়ে জাতিসংঘ ও ত্রাণ সংস্থাগুলো সড়কপথে নিরাপদে ত্রাণ পাঠাতে পারবে।